আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংদবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুতে পুরো পৃথিবীতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এর মধ্যেই তাঁর সম্পত্তি নিয়ে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বিবাদের ইঙ্গিত দিয়েছে স্প্যানিশ ও আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমগুলো।
ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর তাঁর আইনজীবী জানিয়েছিলেন, জীবনের শেষ দিনগুলো ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী তারকা খুবই নিঃসঙ্গ অবস্থায় কাটিয়েছেন। মৃত্যুর আগের রাতেও তাঁর পাশে পরিবারের কোনও লোককে দেখা যায়নি। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সম্পত্তির ভাগীদার হতে একাধিক ব্যক্তি হাজির। মৃত্যুর কিছু দিন আগে, মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পর পরিবারের সদস্যদের এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। কিন্তু তার মৃত্যুর পর বিষয়টা বদলে গেছে।
ম্যারাডোনার মোট সম্পত্তি নেহায়েত কম নয়। কিন্তু ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নগদ অর্থ ছিল বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৫ লাখ টাকার মতো। তার মতো ফুটবল ব্যক্তিত্বের কাছে এই টাকা তেমন আহামরি কিছুই নয়। তবে নগদ অর্থ কম হলেও মোট সম্পদ আছে অনেক। এর মধ্যে চীনে রয়েছে তাঁর ফুটবল স্কুল, বুয়েনস আইরেসের অভিজাত অঞ্চলে বিশাল বাড়ি।
বেশ কিছু অ্যাপার্টমেন্ট, বিএমডব্লিউ, অডি, রোলস রয়েসের মতো বিলাসবহুল ৬টি গাড়ির মালিক ছিলেন ম্যারাডোনা। এছাড়া ইতালি ও কিউবায়ও তার কিছু বিনিয়োগ রয়েছে। উপহার হিসেবে পেয়েছেন বিপুল পরিমাণ পদক ও অলংকার। খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিভিন্ন দেশে অনেক আয় করেছেন তিনি। ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উপার্জনকারী ফুটবলারও। কোকাকোলা, পিউমাসহ বড় বড় ব্র্যান্ডের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কামিয়েছিলেন কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ফুজাইরা ক্লানের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করার সময় দুটি বিলাসবহুল গাড়ি এবং বেলারুশের ক্লাব ডায়নামো ব্রেস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে একটি উভচর ট্যাংক (পানিতে চলতে সক্ষম) উপহার পেয়েছিলেন তিনি। এছাড়া তার ছবি স্বত্ব ও জার্সি, পদকগুলোকে মূল্যবান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ক্যারিয়ারে তার মোট আয় ছিল ৫০০ মিলিয়ন ইউরোর কাছাকাছি। কিন্তু এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো।
ক্যারিয়ারে এত আয় সত্ত্বেও শেষদিকে ম্যারাডোনার কাছে নগদ অর্থ কম কেন? কারণ হিসেবে তাকে অনেকে ঠকিয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তার আইনজীবী আনহেলো পিসানি জানিয়েছেন, উদারতার সুযোগ নিয়ে ম্যারাডোনাকে অনেকে বিপথে চালিত করেছেন। তার অর্থ তাকে না জানিয়ে সরিয়ে নিয়েছেন কেউ কেউ। এছাড়া মাদক, নারী আর বিলাসী জীবনে ডুবে থাকার কারণে বহু অর্থ নষ্ট করেছেন তিনি নিজেই। তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগে মামলাও হয়েছিল।
‘সেলিব্রিটি নেট ওর্থ’ -এর দাবি অনুযায়ী, ম্যারাডোনার একজন উত্তরাধিকারী পাবেন প্রায় ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি ম্যারাডোনার সব সম্পদ, ছবি, জার্সি ও পদকের সম্মিলিত মূল্য হিসাব করে দেখানো হয়েছে। তবে পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। এ ব্যাপারে ম্যারাডোনার মৃত্যুর সংবাদ সবার আগে প্রকাশ করা কিংবদন্তি সাংবাদিক হুলিও চিয়াপেত্তা বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, এটা ম্যারাডোনাকে ঘিরে নতুন এক নাটক হতে যাচ্ছে। ‘
সম্পত্তি বণ্টন করে যাননি ম্যারাডোনা
আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি অনুযায়ী, মৃত্যুর আগে কাউকে সম্পত্তির উইল (অছিয়তনামা) লিখে যাননি ম্যারাডোনা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তার সম্পত্তির দাবিদার তার উত্তরাধিকারীরাই হবেন। ম্যারাডোনার স্বীকৃত সন্তান পাঁচজন- দালমা ও জিয়ানিন্না (তাদের মা ম্যারাডোনার সাবেক স্ত্রী ক্লদিয়া ভিয়াফানে), জানা (যার মা ম্যারাডোনার সাবেক বান্ধবী ভ্যালেরিয়া সাবালেইন), দিয়েগো জুনিয়র (তার ইতালিয়ান পুত্র, যার মা ক্রিস্তিনা সিনাগ্রা) এবং দিয়েগো ফার্নান্দো (সাবেক বান্ধবী ভেরোনিকা ওজেদার পুত্র)।