ছেলে ইরফান সেলিম গ্রেপ্তারে হাজী মো. সেলিম বিপাকে পড়ার পর পুরান ঢাকায় তার দখল থেকে নিজেদের দাবিকৃত একটি জমি উদ্ধার করেছিল অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ; কিন্তু মাস না গড়াতেই এই সংসদ সদস্য সেই জমি পুনর্দখল নিয়েছেন।
হাজী সেলিম জমিটি পুনরায় দখলে নেওয়ার পর এখন ভয়ে আছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার কর্পোরেট শাখার কর্মীরা। মারামারি এড়াতে ওই জমির দখল নিতে যাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন শাখার দায়িত্বে থাকা সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) বৈষ্ণব দাস মণ্ডল।জমিটি দখলে নেওয়ার বিষয়ে হাজী সেলিমের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার আইনজীবী আগের মতোই দাবি করেছেন, ওই জমি হাজী সেলিমের কেনা জমি, যা তার স্ত্রী গুলশানারা বেগমের নামে।স্বাধীন বাংলাদেশে অগ্রণী ব্যাংকের প্রথম যে শাখাটি উদ্বোধন করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, সেটা এই জমিতেই ছিল। ২০০৩ সাল থেকে ২০ শতকের জমিটি ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের দখলে, যদিও তা নিয়ে মামলা চলছে।নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় হাজী সেলিমের ছেলে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরফান সেলিম গত ২৬ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন। র্যাব সেদিন হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালালেও তাকে পায়নি।
এর ক’দিন বাদেই অগ্রণী ব্যাংকের এজিএম বৈষ্ণব দাস মণ্ডল লোকজন নিয়ে এসে সেই জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে থাকা জরাজীর্ণ পুরনো ভবন ভেঙে ফেলেন। একটি দেয়াল তুলে নতুন ভবনের কাজ শুরুর জন্য নির্মাণ সামগ্রীও আনা হয়।তার এক মাস গড়ানোর আগে রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেই নির্মাণ সামগ্রীর কিছুই নেই সেখানে। সেগুলো সরিয়ে গুলশানারা বেগমের মালিকানা দাবির সাইনবোর্ড ঝুলছে সেখানে।স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন আগে হাজী সেলিম জায়গাটি দখলে নিয়ে পাহারা বসিয়েছেন। ফলে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জমির আশেপাশে ভিড়তে পারছে না।
রবিউল ইসলাম নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অগ্রণী ব্যাংকের এই শাখা আমরা অনেক আগে থেকেই শুনে আসছি, এখন আবার শুনছি এটা হাজী সাহেবের জায়গা।“কিছু দিন আগে অগ্রণী ব্যাংকের লোকজন দখলে নিয়েছিল, কয়েকদিন আগে আবার হাজী সেলিমের লোকজন দখলে নিয়ে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছে।” অগ্রণী ব্যাংকের মৌলভীবাজার শাখার এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা এখন একা একা চলতেও ভয় পাচ্ছি। এ ঘটনার পর চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। র্যাবকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
জানতে চাইলে মৌলভীবাজার শাখার ব্যবস্থাপক বৈষ্ণব মণ্ডল রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাজী সেলিম সাহেবের লোকজন আবার জায়গাটি দখলে নিয়েছে। আমরা এখানে দেয়াল তুলেছিলাম সেটাও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন তাদের লোকজন পাহারা দিচ্ছে।“আমরা দখলে গেলে মারামারি হবে, তাই আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা চেয়েছি, তবে এখনও তেমন সাড়া পাইনি।”
তার ভাষ্যে, স্বাধীনতার আগে এই জায়গাটি পাকিস্তানি হাবিব ব্যাংকের শাখা ছিল। স্বাধীনতার পর এটার মালিকানা অগ্রণী ব্যাংকের হয়। “২০০৩ সালে হঠাৎ করে কিছু লোকজন দলিলপত্র তৈরি করে জায়গার মালিকানা দাবি করে। তারা আমাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিস করে এবং আমাদের ছেড়ে দিতে হয়।” এরপর অগ্রণী ব্যাংক আদালতে মামলা করে, যা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। ওই জমির দখলদারদের উপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাইতে অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আদালতের কাছে গেলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।জমিটি পুনরায় দখলে নেওয়ার বিষয়ে হাজী সেলিমের কোনো বক্তব্য চেষ্টা চালিয়েও পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।গুলশানারার আইনজীবী শ্রী প্রাণ নাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আগের মতোই বলেন, জায়গাটি হাজী সেলিমের কেনা জমি।
“জায়গাটি একজনের কাছ থেকে হাবিব ব্যাংক ভাড়া নিয়েছিল। হাবিব ব্যাংকের কাছ থেকে অগ্রণী ব্যাংক ভাড়া নিয়েছে। মূল মালিকের মৃত্যুর পর ওয়ারিশদের কাছ থেকে হাজী সাহেব উনার স্ত্রীর নামে কিনে নিয়েছেন। এই জমির নামজারি, খারিজ- সব হাজী সাহেবের স্ত্রীর নামে।”